সোমা ঘোষ।

বাড়ি থেকে চুরি যায়নি কিছুই। সোনার হারও রয়ে গিয়েছে গলাতেই। উধাও শুধু মোবাইল ফোন। কেষ্টপুরের গৃহবধূ সোমা ঘোষের (৪৫) খুনের তদন্তে নেমে এখন সেই মোবাইলটিরই খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, মোবাইল ফোনটি পাওয়া গেলে রহস্যের অনেকটাই কিনারা হয়ে যাবে। তবে দেহ উদ্ধারের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও কোনও নির্দিষ্ট সূত্রে পৌঁছতে পারেনি পুলিশ।
সোমবার দুপুরে কেষ্টপুরে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হন সোমা। মেয়ে সায়নী স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখে মা রক্তাক্ত অবস্থায় বসার ঘরে পড়ে রয়েছেন। খুনের তদন্তে নেমে মৃতার স্বামী সুজিত ঘোষের পাশাপাশি সোমার বন্ধু পূরবী সাহাকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন দুপুরে সোমার বাড়িতেই যাওয়ার কথা ছিল পূরবীর। মায়ের ওই অবস্থা দেখে সায়নী ছুটে গিয়েছিল তাঁর বাড়িতে। পূরবী বাড়িতে ছিলেন না। প্রশ্ন উঠেছে, তখন তিনি কোথায় ছিলেন? তদন্তকারীদের পূরবী জানান, ওই সময়ে তিনি নিউ টাউনের শপিং মলে গিয়েছিলেন। সেখানে কেনাকাটার বিলও পুলিশকে দেখিয়েছেন তিনি।
পূরবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে সোমার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। পুলিশের দাবি, পূরবী জানিয়েছেন, সোমা বিভিন্ন সময়ে বাড়ি থেকে বেরোতেন। তিনি কাদের সঙ্গে মিশতেন, কারা তাঁর বন্ধুবান্ধব ছিল, সে বিষয়ে পূরবীর দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরের এক অফিসার জানিয়েছেন, সোমার পরিচিত দু’জনকে বাগুইআটি থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 
পুলিশ জেনেছে, ইংরেজি দৈনিকের চাকরি চলে যাওয়ার পরে সুজিতের প্রিন্টিং সামগ্রী সরবরাহ ব্যবসাও ভাল চলছিল না। বাড়ির গয়না বন্ধক রেখে সংসার চালানোর মতো অবস্থা হয়েছিল তাঁদের। তাই সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সোমা কোনও কাজ করছিলেন কি না এবং সেখানে কোনও গণ্ডগোল হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমা কোথায় যেতেন, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন এ ব্যাপারে পূরবী অনেকটাই জানেন। তাই মঙ্গলবার দফায় দফায় সোমার স্বামীর পাশাপাশি পূরবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।” সোমার সঙ্গে সুজিতের পারিবারিক অশান্তি চলছিল কি না, তা দেখছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সুজিত জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তিনি ব্যবসার কাজে মুকুন্দপুরে গিয়েছিলেন। সত্যিই তিনি সেখানে ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সোমাদেবীর দেহ যে ঘরে ছিল, সেখানে টেবিলে একটা গ্লাসে প্রায় শেষ হওয়া ঠান্ডা পানীয় ছিল। ওই গ্লাস ও ঘরের পারিপার্শ্বিক কিছু তথ্যপ্রমাণ দেখে পুলিশের অনুমান, ওই দিন সোমার পরিচিত কেউ ওই ঘরে এসেছিলেন। যে অস্ত্রে সোমাকে খুন করা হয়েছিল, সেটি ওই বাড়ির রান্নাঘর থেকে নেওয়া কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পুলিশ জানায়, খুনের ধরন ও সোমার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও পেশাদার খুনি এ কাজ করেনি।