Friday 1 August 2014

ম্যালেরিয়ার রস-ঠিকুজি কলকাতারই দান

                      রোনাল্ড রস

ম্যালেরিয়ায় প্রায় ফি-বছরই কাবু হয় কলকাতা। আবার ওই রোগের উৎস সন্ধানের কৃতিত্বের দাবিদার হিসেবেও শেষ পর্যন্ত জিতল কলকাতাই!
নোবেলজয়ী রোনাল্ড রস কোথায় বসে ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন, সেই প্রশ্নে কলকাতাকে হারিয়েই দিয়েছিল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তাদের মতে, কলকাতা নয়, ওই কৃতিত্ব সেকেন্দরাবাদের।
কিন্তু জাতীয় গ্রন্থাগারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, সেকেন্দরাবাদ নয়। রোনাল্ড রস কলকাতায় বসেই ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন।
২০১৩ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল, কোথায় বসে রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন? উত্তরে কলকাতা কিংবা সেকেন্দরাবাদ কোনও একটিকে বেছে নিতে বলা হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। যাঁরা কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন, সেই সব পরীক্ষার্থী নম্বর পাননি। আর সেকেন্দরাবাদকে বেছে নেওয়া পরীক্ষার্থীদের নম্বর দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
আইনজীবী শান্তনু চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এক নম্বরের জন্য টেট-এ উত্তীর্ণ হতে পারেননি অনেক প্রার্থী। উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার বাসিন্দা পাপড়ি দে-সহ এই ধরনের কিছু পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র যাচাইকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। দেখা যায়, যাঁরা ওই প্রশ্নের উত্তরে সেকেন্দরাবাদ লিখেছেন, তাঁদের নম্বর দেওয়া হয়েছে। যে-সব পরীক্ষার্থীর উত্তর ছিল কলকাতা, তাঁদের নম্বর দেওয়া হয়নি। তার পরেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই পরীক্ষার্থীরা। সেই মামলায় বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে জাতীয় গ্রন্থাগারকে নথিপত্র পেশ করতে হবে। গত সপ্তাহে আদালতে সেই নথি জমা দেন জাতীয় গ্রন্থাগার-কর্তৃপক্ষ।
এ দিন উচ্চ আদালতে সেই নথি খোলা হয়। তাতেই ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কারের জায়গা হিসেবে কলকাতাকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেই নথির ভিত্তিতেই বিচারপতি সমাদ্দার জানান, ওই প্রশ্নের উত্তরে যে-সব পরীক্ষার্থী কলকাতা লিখেছেন, তাঁদের এক নম্বর দিতে হবে। এবং চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন ফল প্রকাশ করতে হবে পর্ষদকে।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের রায়ের ফলে অনেক পরীক্ষার্থী টেট পাশ করবেন। তাই ফলাফলেও বড়সড় পরিবর্তন হবে। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এখনও আদালতের রায়ের প্রতিলিপি পাইনি। আমাদের আইনজীবীরা এখনও কিছু জানাননি। রায়ের প্রতিলিপি পেলে এ ব্যাপারে আমাদের মত জানাব।”
কিন্তু রোলাল্ড রস সেকেন্দরাবাদে বসে ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন, এমন তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ পেল কোথা থেকে? পর্ষদ সূত্রে বলা হয়, তাঁদের বিশেষজ্ঞেরা বিভিন্ন বিদেশি জার্নাল এবং এনস্লাইকোপিডিয়া ব্রিটানিকা ঘেঁটে ওই তথ্য পেয়েছেন। তাঁদের পাওয়া তথ্য বলছে, ম্যালেরিয়ার জীবাণু সেকেন্দরাবাদে বসেই আবিষ্কার করেন রোলান্ড রস। কলকাতায় বসে তিনি সেই জীবাণু জীবদেহের উপরে প্রয়োগ করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত নথিপত্রও হাইকোর্টে জমা দিয়েছিলেন পর্ষদের আইনজীবীরা।

ভোট লুঠ ঠেকাতে বুথরক্ষা বাহিনী চান অমিত

লোকসভা নির্বাচনে দল একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তার পরেও উত্তরাখণ্ড বিধানসভার উপনির্বাচনে দল একটি আসনেও জিততে পারেনি। উল্টে নিজেদের দখলে থাকা দু’টি আসন খুইয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনকেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের নতুন সভাপতি অমিত শাহ। আর সেটা করতে গিয়ে ভোটে বিরোধীদের হাতে বুথ লুঠ হওয়া ঠেকাতে এ বার ‘বুথরক্ষা বাহিনী’ তৈরির নির্দেশ দিলেন তিনি।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন অমিত। সেখানে বিজেপি অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করলেও বহু জায়গাতেই বিরোধীদের হাতে বুথ দখলের ঘটনা নজরে এসেছে দলীয় নেতৃত্বের। পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার থেকেও বহু বুথ লুঠের খবর পেয়েছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গের ফল পর্যালোচনা করে বিজেপি নেতৃত্বের ধারণা, বুথ দখল না হলে বিজেপি আরও কয়েকটি আসন অনায়াসেই জিততে পারত। দলের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনকে জানালেও বহু ক্ষেত্রেই সময় মতো সাড়া মেলে না। এ বারে তাই দলীয় স্তর থেকেই এর মোকাবিলায় নামছেন অমিত শাহ। দলের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুথ স্তরে সংগঠন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতাদের। বুথ আগলে রাখার জন্যও তরুণ কর্মীদের তৈরি করতে বলছেন নবনিযুক্ত বিজেপি সভাপতি।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার ব্যাপারে পারদর্শিতার জন্য বিজেপির অন্দরে অনেকেই অমিত শাহকে ‘মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট’ বলে ডাকেন। দু’দিন আগেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে ভোট জয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। অমিত-ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, রাহুল সিংহকেও এই ‘বুথরক্ষা বাহিনী’ তৈরির কথা তিনি বলেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিজেপির সমস্যা হল, গো-বলয়ের রাজ্যগুলির মতো সেখানে সাংগঠনিক শক্তি সে ভাবে তৈরি হয়নি। ফলে এখন কয়েকটি বুথে এই বাহিনী তৈরি সম্ভব হলেও অধিকাংশ বুথেই তা সম্ভব নয়। তবে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির প্রতি মানুষের ভরসা বাড়ছে, সেটা আশার কথা। অন্য দলের কর্মীরাও এখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। ফলে তাঁদের নিয়ে একটি শক্তিশালী টিম তৈরি করতে হবে প্রতিটি বুথে।”
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বড় পরীক্ষা হতে পারে বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন।  নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগেই বিধানসভার দু’টি আসনে উপনির্বাচন হতে পারে। ওই দু’টি কেন্দ্র হল কলকাতার চৌরঙ্গি এবং উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট দক্ষিণ। চৌরঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র পদত্যাগ করেছেন। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচনের আগে ও পরে রাজ্যের ৬ জন বিধায়ক দলবদল করেছেন। কিন্তু তাঁরা এখনও পদত্যাগ করেননি। নির্বাচন কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, ওই দু’টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে যদি দলবদলকারীরা পদত্যাগ করেন, তা হলে মোট ৮টি আসনে একই সঙ্গে ভোট হতে পারে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, রাজ্য বিজেপি কোনও ‘বুথরক্ষা বাহিনী’ গড়তে পারল কি না এবং তারা কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে, তার একটা মহড়া হয়ে যাবে ওই ভোটে। 
সংসদের অধিবেশন চলাকালীন সপ্তাহে এক দিন দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত থাকেন। আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে সেই বৈঠকে বেনজির ভাবে অমিত শাহকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে মোদী পুষ্পস্তবক দিয়ে বিজেপির নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানান। সভাপতি হওয়ার পর সাংসদদের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অমিত শাহ বলেন, মানুষের সঙ্গে কোনও ভাবে যোগাযোগ যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। গত সপ্তাহেই সংসদের ওই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ। এতে অসন্তুষ্ট হন মোদী। তার পরে সাংসদদের সময়ে আসার নির্দেশ দেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। কিন্তু তার পরেও আজ জনা চল্লিশ সাংসদ অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের চিহ্নিত করে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন বেঙ্কাইয়া।

ভক্তবালা-কাণ্ডে আচমকা সাসপেন্ড টিএমসিপি নেতা

           তন্ময় আচার্য

নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের কাছে টাকা নেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা তন্ময় আচার্যকে সাসপেন্ড করল সংগঠন।
বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় সংগঠনের নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ দিন তন্ময়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের এ বার কী হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।”
চাপড়ার এই কলেজে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পড়ুয়া ভর্তির ঘটনায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে আগেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, সেখানে ছাত্র ভর্তিতে টাকার লেনদেন হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তবে এ দিন তন্ময়কে টিএমসিপি সাসপেন্ড করেছে শুনে সেই শিক্ষামন্ত্রীরই প্রতিক্রিয়া, “শঙ্কু যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে ঠিক কাজই করেছে।”
তা হলে এ বার কি তিনি অভিযোগকারী পড়ুয়াদের তন্ময়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন? সরাসরি জবাব না দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও ধরনের বেআইনি কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তদন্তে যিনিই দোষী প্রমাণিত হন, তিনি ছাড় পাবেন না।”
তন্ময় আচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ রকম কোনও খবর আমার জানা নেই। তাই কিছু বলতে পারব না।” টিএমসিপি-র নদিয়া জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের বক্তব্য, “রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি জানেন।”
গত জুন মাসে ছাত্র-ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ভক্তবালা বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করে। এর পরেই কলেজের পরিচালন সমিতির তরফে অমর বিশ্বাস অভিযোগ করেন, টিএমসিপি নেতা তন্ময় আচার্যের চাপে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। অতিরিক্ত  পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন পেতে অসুবিধা হবে না বলে তন্ময় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন অমরবাবু। কলেজের অতিরিক্ত ৩৯ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৭ জন লিখিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অভিযোগ জানান, তাতেও অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ছিল তন্ময়।
তবে টিএমসিপি গোড়া থেকেই তন্ময়ের পাশে ছিল। নদিয়া জেলা টিএমসিপি থেকে তন্ময়কে সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি করার প্রস্তাবও যায় রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার গঠিত এক সদস্যের কমিটি অভিযোগের তদন্তে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তন্ময় আচার্যকে না ডাকায় অনেকেই মনে করতে থাকেন, ওই ছাত্র-নেতাকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট দেওয়া এক সপ্তাহ আগে একই অভিযোগের তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কমিটি ভেঙে দেওয়ায় তদন্তের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়ছিল অভিযোগকারীদের একাংশের।
তাই এ দিন তন্ময় সাসপেন্ড হয়েছেন খবর পেয়ে রীতিমতো অবাক ভক্তবালার অভিযোগকারীরা। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, “তন্ময়কে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে যা হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল না ওঁর কিছু হবে। তার পরে এই খবরটা অবাক হওয়ার মতোই।”
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু বলেন, “এটা সংগঠনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে মন্তব্য করব না।”
তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা কলেজ-কর্তা অমর বিশ্বাস বলেন, “প্রথম থেকেই বলছিলাম, তন্ময় দুর্নীতিতে জড়িত। এ বার প্রমাণ হবে, আমি কোনও দোষ করিনি।”

পিএফ বকেয়া, বেতনেও কাঁচি নিগম-কর্মীদের

ভাঁড়ারের এমনই হাল, যে এ বার কর্মীদের বেতনেও হাত দিয়েছে রাজ্যের প্রধান তিন পরিবহণ নিগম। ধাক্কা সামলাতে কখনও কর্মীদের কো-অপারেটিভ তহবিলে টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে না, কখনও আবার টাকা জমা পড়ছে না কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে। এমনকী কোনও কোনও মাসে কর্মীদের পুরো বেতনটুকুও হাতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের একটি অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা পড়ার কথা। কোথাও আবার বেতনের একটি অংশ জমা পড়ে কর্মীদের কো-অপারেটিভ তহবিলে। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কর্মীদের বেতনের এই অংশ সংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা না-পড়ে নিগমের দৈনন্দিন কাজে খরচ করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, গত দু’বছরে এনবিএসটিসি-তে কর্মীদের পিএফ-এর টাকা জমা পড়েনি। বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সুদ-সহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ফের পিএফ তহবিলে কর্মীদের অংশ জমা দিতে শুরু করেছে নিগম। সে জন্য আবার প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের ২৫% অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে। বকেয়া বেতনের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ৩৫ কোটি ছাড়িয়েছে।
একই ভাবে, সিএসটিসি এবং সিটিসি-র কর্মীদের বকেয়া পিএফ-এর টাকার অঙ্কও দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এই দুই নিগমের কো-অপারেটিভ তহবিলেও কর্মীদের বেতনের অংশ প্রতি মাসে পড়ছে না। সিএসটিসি-র কো-অপারেটিভ তহবিলে কর্মীদের বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি, সিটিসি-তে প্রায় ৭ কোটি। কো-অপারেটিভে কর্মীদের বকেয়া অর্থ মেটানোর জন্য সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছে ঋণ চেয়েছে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ।
কেন এই হাড়ির হাল?
পরিবহণ কর্তারা জানান, বছর দেড়েক আগেও সিএসটিসি-র আয় হত মাসে ছ’কোটি টাকার মতো। তার পর থেকে কয়েক দফায় জ্বালানির দাম বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি। ফলে এক দিকে যেমন বাসের সংখ্যা কমেছে, অন্য দিকে বেড়েছে লোকসানের বহরও। সব মিলিয়ে আয় প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য নিগমের হালও কমবেশি একই। সিএসটিসি-র সিটু নেতা রমাপ্রসাদ সেনগুপ্তর দাবি, “কর্মীদের কো-অপারেটিভ সোসাইটি এখন চালায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। আমরা শুনেছি, কো-অপারেটিভের হাতে টাকা নেই। ফলে প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারছেন না কর্মীরা। অবসরের সময় কর্মীরা কো-অপারেটিভে জমানো তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।” তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতার দাবি, “ছ’মাস ধরে টাকা না পেয়ে আমরা বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছি।” একই পরিস্থিতি সিটিসি-রও। তবে সংস্থা সূত্রের খবর, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বাম আমলের আগে থেকেই বকেয়া ছিল। গত তিন বছরে তার পরিমাণ বেড়েছে।
নিগমগুলির এই দুর্দশার জন্য আগের আমলের উপরেই দায় চাপিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “এ সবই ৩৪ বছরের অপশাসনের ফল। ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। এটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি জানান, পিএফ বা কো-অপারেটিভের টাকা কর্মীদের প্রাপ্য। ওই টাকা দিতেই হবে। কেন টাকা জমা পড়েনি, তা তিনি খতিয়ে দেখবেন। তবে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি এড়িয়েই গিয়েছেন মন্ত্রী।
ভাড়া না বাড়লে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে বলে মনে করেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু। তিনি বলেন, “এখন যা অবস্থা, তাতে কিছুটা ভাড়া তো বাড়াতেই হবে। না হলে যা আছে, সেটাও ধসে পড়বে।”